Tuesday, July 19, 2016

চলো ঘুরে আসি পাহাড়ের দেশে

অনেকে এই পথ ধরে  গিয়েছেন, বহুবার। চলতি পথে বিমোহিত অনেকেরই মুখ থেকে অস্ফুটে বের হয়েছে, বাহ্‌! গন্তব্য আপনাকে টানলেও, পথ ফুরাবে জানলেও আপনি চেয়েছেন পথ যেন না ফুরোয়। রাস্তার দুই পাশে ঘন জঙ্গল, সারি সারি গাছপালা আপনার ভালো লাগাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে বারবার। সেসব গাছপালা সরিয়ে আপনি কখনো দৃষ্টি প্রসারিত করেছেন পথের দুই পাশের গাছপালা বা নিচের চমৎকার লেকের দিকে। 


পাহাড়ের ধাপে ধাপে জুম আর কত না ভালো লাগা, কখনো কখনো জুমচাষি-পাহাড়িদের মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে দেখেছেন।

সেই পথের কথাই বলব। অসাধারণ পাহাড়ি সেই পথ। রাঙামাটি থেকে কাপ্তাইয়ের পথ এটি। কাপ্তাই থেকে রাঙামাটি যেতে সময় বাঁচাতে আমরা এই পথটাই বেছে নিয়েছিলাম। এই পথ ধরে চলাটাও এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
 ট্রেন থেকে নেমে চড়ে বসি বন বিভাগের তাপানুকূল মাইক্রোবাসে। একে একে চট্টগ্রামের বাজার-মহল্লা পেছনে ফেলে একসময় শেখ রাসেল সাফারি পার্কে যাত্রাবিরতি। সাফারি পার্ক ঘোরা শেষ করে আবার চলি কাপ্তাইয়ের দিকে। এভাবেই একসময় পৌঁছে যাই কাপ্তাই বন বিভাগের বিশ্রামাগার বনফুলে। তারপর কাপ্তাই ফরেস্ট। কাপ্তাই ফরেস্টের শতবর্ষের পুরোনো বিশ্রামাগার ঘুরতে যাই। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সেই অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা সন্ধ্যাবেলা চলে আসি কাপ্তাই সেনাবাহিনীর পিকনিক স্পট হয়ে জিপতলি হেলিপ্যাডে। একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। তার ওপর সন্ধ্যা নামি নামি করছে। আকাশে সোনারং। সেই গোধূলি অনেক দিন মনে থাকবে। আমরা জিপতলি হেলিপ্যাড ও তার আশপাশের রূপ-সৌন্দর্য চোখে ধারণ করে সেদিনের মতো কর্ণফুলী তীরে বন বিভাগের বিশ্রামাগার বনফুলে অবস্থান নিই। একবার রাত না কাটালে বোঝানো যাবে না বনফুলের অসাধারণত্ব। পরদিন সকালবেলা বের হলাম রাঙামাটির উদ্দেশে।
সেদিন মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির দিন। ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি অঝোর ধারায় বৃষ্টি। পথে নেমে অবশ্য ঝকঝকে রোদের মুখোমুখি হতে হলো। তারপর আমাদের এগিয়ে চলা। প্রথম আমাদের যাত্রাবিরতি ছিল খালেকের দোকানে। পাকা পেঁপে আর কলা দেখে সঙ্গে চায়ের পিপাসা মিলিয়ে বিরতি একটা দিতেই হলো। খালেকের দোকান নামে বেশ পরিচিত হলেও আমাদের কাভার্ড ভ্যানচালক জানালেন, জায়গার নাম কামাইল্যাছড়ি। ভ্যানচালকের তাড়ায় আমরা যাত্রা শুরু করি। কিছুদূর যেতেই আবার যাত্রাবিরতি। এবার জুমচাষ দেখতে হবে। নামলাম পথে। হঠাৎ একপশলা বৃষ্টি। পাশেই একটা অস্থায়ী বাঁশ-বেতের ঘর পেয়ে গাড়িতে না উঠে সেই ঘরে গিয়ে বসলাম। সবুজভরা পুরো এলাকা খুব ভালো লাগার। পাশেই কাপ্তাই হ্রদের জল। সব মিলিয়ে সময়টা ছিল অসাধারণ। ঝুপ করে যেভাবে বৃষ্টি নেমেছিল, টুপ করে সেভাবেই সূর্য আলো ঢেলে দিল। আবার পথ আমাদের সঙ্গী হলো। চালক জানালেন, সেই জায়গার নাম ভরাদোম। ২৮ কিলোমিটার দূরত্বের ৪৫ মিনিটের রাস্তায় ইতিমধ্যে আমরা এক ঘণ্টা পার করেছি। পথ ও দুই পাশের মনকাড়া সৌন্দর্য আমাদের গন্তব্যে যাওয়ার ইচ্ছাটাই দূর করে দিয়েছিল। ইতিমধ্যে আমরা মানিকছড়ি চলে এসেছি। আকাশ মেঘে ঢাকা, বৃষ্টি নামবে যখন-তখন। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। ৪৫ মিনিটের রাঙামাটি নতুন রাস্তার ভ্রমণ আমরা শেষ করলাম দুই ঘণ্টায়।
আমরা রাঙামাটি পৌঁছলাম। বন বিভাগের বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা। পুরো রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ আর কর্ণফুলী নদী দিয়ে ঘেরা। আমাদের ছুটে আসা এই অপরূপ জায়গা দেখার জন্য। আমরা রাঙামাটিতে দেখেছি ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝরনা, কাপ্তাই হ্রদের পেদাটিংটং রেস্তোরাঁটা—সবকিছুতেই যেন প্রকৃতির অনন্য তুলির আঁচড়। শুভলং বাজারও ঘুরে দেখেছি একদিন। দেখেছি রাজবন বিহার আর কাপ্তাই হ্রদের পাশে বৌদ্ধবিহার। দেশের একমাত্র গজদন্ত কারুশিল্পী বিজয়কেতন চাকমার বাসা, সেটিও দেখার মতো। 
প্রয়োজনীয় তথ্য
কাপ্তাই বা রাঙামাটি সরাসরি বাস চলে। রাঙামাটিতে থাকার হোটেলও পেয়ে যাবেন সুবিধামতো। রাঙামাটির সরাসরি বাস হচ্ছে সৌদিয়া, শ্যামলী, ডলফিন, এস আলম প্রভৃতি। রাঙামাটিতে থাকার বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। পর্যটন করপোরেশনের হলিডে, হোটেল সুফিয়া, হোটেল লেক ভিউ ও হোটেল প্রিন্স অন্যতম। 

No comments:

Post a Comment